খেজুরের গুড়ের দাম কত ২০২৪
আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা খেজুরের গুড়ের দাম সম্পর্কে আলোচনা করবো। শীতের দিনে বাঙ্গালি উৎসুক হয়ে উঠে খেজুর গুড় কেনার জন্য। শীতকালে গুড়ের স্বাদ বাঙালির কাছে মধুর সমান। শীতের দিনে খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠা ছাড়া যেনো বাঙ্গালির একেবারেই চলে না। আমাদের দেশে খেজুরের রস থেকে অনেক ধরণের গুড় তৈরি করা হয়। বছরের শেষে গুড় দিয়ে তৈরি পিঠে, পুলি, পায়েস, মিষ্টি খেয়ে থাকে বাঙ্গালি। খেজুর গুড় নিজস্ব গন্ধ ও স্বাদের জন্য সবার পছন্দের। শীতের পিঠা পায়েসের বেশিরভাগ তৈরিতেই ব্যবহার হয় খেজুর গুড়। তাই অনেকেই জানতে চায় খেজুর গুড়ের দাম কত। চলুন জেনে নেই খেজুর গুড়ের দাম।
খেজুরের গুড়ের দাম কত
সাধারণত খেজুরের গুড়ের দাম এর মান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুর গুড়ের দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গুড়ের দাম অনেকটা বেশি। ২ থেকে ৩ বছর আগেও খেজুর গুড় ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতো। তবে বর্তমানে সব কিছুর দাম বাড়ার সাথে সাথে খেজুর গুড়ের এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
খেজুরের গুড় কত টাকা কেজি
খেজুর গুড় খেতে অনেক সুস্বাদু। এই খেজুর গুড়ের স্বাদের জন্যই খেজুর গুড় অনেক বিখ্যাত। বাংলাদেশে অনেক জায়গায় খেজুর গুড় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে খেজুর গুড়ের অনেক বড় বড় হাট হয়ে থাকে। বাঙ্গালির কাছে খেজুর গুড় ছাড়া পিঠা পায়েস এই গুলো ঠিক জমে না। শীতের পিঠা পায়েসের বেশিরভাগ তৈরিতেই ব্যবহার হয় খেজুর গুড়। খেতে সুস্বাদু বলেই এটি বেশি খাওয়া হয়। সাধারণত হাটে বাজারে খেজুর গুড় কেজি ধরে বিক্রি করা হয়। তাই অনেকেই জানতে চায় খেজুর গুড় কত টাকা কেজি। চলুন জেনে নেই খেজুর গুড় কত টাকা কেজি।
বাংলাদেশে অনেক ধরণের খেজুর গুড় পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি কেজি নারকেলী খেজুর গুড়ের দাম ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি পাটালি খেজুর গুড়ের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। এবং ১ কেজি গন্ধবাতাসী খেজুর গুড়ের দাম ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। তবে এর দাম স্থানভেদে কম বেশি হতে পারে।
খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যায়
খেজুর এক ধরণের সুস্বাদু খাবার যা খেজুরের রস থেকে তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তার পর সেই রস আগুনে দীর্ঘসময় জাল দিয়ে ঘণ করে গুড়ে পরিণত করা হয়। ধরন অনুযায়ী খেজুরের গুড়কে ঝোলা গুড়, দানাগুড়, পাটালি, চিটাগুড়, নারকেলী গুড় ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে খেজুর গুড়ের অনেক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই একটা কথা জানতে চায় তা হলো খেজুর গুড় কোথায় পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই খেজুর গুড় কোথায় পাওয়া যায়।
প্রাপ্তিস্থান বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে খেঁজুরের গুড় পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলাদেশে সব থেকে বড় খেজুর গুড়ের হাট চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের হাটে। মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে এই হাট। যারা ভালো মানের খেজুর গুড় ক্রয় করতে চান তারা চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের হাট থেকে ক্রয় করতে পারবেন। এবং এখান থেকে পাইকারি দামেও গুড় ক্রয় করা যায়।
খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
শীতমানেই বিভিন্ন ধরণের পিঠা খাওয়ার উৎসব। আর খেজুর গুড় পিঠার স্বাদকে আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। শীতকালে বেশিভাগ পিঠা খেজুর গুড় দিয়ে বানানো হয়। তবে বর্তমানে বাজারে অনেক ভেজাল গুড় দেখা যায়। অনে ভেজাল গুড়কে ভালো গুড় বলে চালিয়ে দেয় অনেক ব্যবসায়ী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায় কি। তাহলে চলুন জেনে নেই খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়।
(১) খেজুরের গুড় প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি হয়। বাড়তি চিনি মেশালে এর রঙ ও স্বাদে প্রভাব পড়ে। খেজুরের গুড়ের পাটালির রঙ গাঢ় লাল বা কালচে লাল হয়। চিনি মেশানো গুড় কিছুটা সাদা হয়ে যায়। রাসায়নিক ও ফিটকিরি মেশানোর কারণেও গুড়ের রঙ সাদা হতে পারে।
(২) গুড় দেখতে উজ্জ্বল হয় না। চকচকে ধরনের রঙ বা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হলে সেই গুড় খাঁটি নয়।
(৩) চিনি মিশিয়ে তৈরি পাটালি খুব শক্ত হয়। বিশেষ করে গুড়ের দুই ধার যদি অতিরিক্ত শক্ত ও ধারালো হয় তবে সেটা না কিনলেই ভালো করবেন।
(৪) পাটালির ভেতরের অংশ রসালো হয়। তাই কেনার আগে ভেঙে দেখুন। যদি শুকনো মনে হয় তবে কিনবেন না।
(৫) এক গ্লাস পানিতে গুড়ের টুকরা ফেলুন। ধীরে ধীরে গলে গেলে বুঝবেন গুড় খাঁটি। নিচে জমে গেলে সেটাতে ভেজাল রয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতি থাকতে পারে।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুর গুড় প্রায় সবার কাছেই অনেক পছন্দের। নানা ধরনের পিঠা এবং মিষ্টিজাতীয় কোনো খাবার বানাতে এই খেজুর গুড়ের কোনো বিকল্প নেই। খেজুর গুড় পছন্দ করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। তবে খেজুর গুড় খেলে কি কি উপকারিতা এবং অপকারিতা হয় তা অনেকেই জানে না। তাই আজকে আমরা জানিয়ে দিবো খেজুর গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা।
উপকারিতাঃ
পুষ্টিবিদরা বলছেন, চিনির চেয়ে গুড় খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আর নানা ধরনের গুড়ের মধ্যে খেজুর গুড়ের পুষ্টি অনেক বেশিই বলা যায়। খেজুর গুড় ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পারেন এক চামচ খেজুর গুড়। খেজুর গুড় কোল্ড অ্যালার্জি থেকে অনেকটাই আপনাকে দূরে রাখে। রক্তাল্পতায় ভুগলেও খেতে পারেন খেজুর গুড়। কারণ, এই গুড় শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও খেতে পারেন এই গুড়।
কাবোহাইড্রেট, আয়রন কিংবা গ্লুকোজের ঘাটতি হলেও খেজুরের গুড় শরীরে ভালো কাজ করে। গুড়ে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কাজে লাগাতে পারেন সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও। কেননা, এই গুড় ত্বক সতেজ রাখে, পাশাপাশি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়।
অপকারিতাঃ
নাক থেকে রক্তক্ষরণ: প্রচণ্ড গরমের দিনে গুড় খেলে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই গ্রীষ্মকালে গুড় না খাওয়াই নিরাপদ। রোগের তীব্রতা বাড়াতে পারে: গুড় প্রক্রিয়াজাত নয় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে সুক্রোজ থাকে। তাই যাদের বাত বা প্রদাহভিত্তিক রোগ আছে তাদের গুড় বাদ দেওয়া কিংবা একেবারে সামান্য পরিমাণে খাওয়া উচিত। এছাড়াও খেজুর গুড়ে আরো অনেক অপকারিতা থাকতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় খেজুর গুড়ের উপকারিতা বেশি।
আশা করি আপনারা আমাদের আজকে এই আর্টিকেল থেকে খেজুর গুড়ের দাম , খেজুর গুড় কোথায় পাওয়া যায়, খেজুর গুড় চেনার উপায়, এবং খেজুর গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পুড়ো পোস্টটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।