মাল্টা ও কমলা কত টাকা কেজি ২০২৪
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকে আমরা মাল্টা ও কমলার দাম সম্পর্কে আলোচনা করবো। আমরা জানি কমলা এবং মাল্টায় অনেক উপকারিতা গুনাগুন আছে। কমলা লেবু বা ম্যান্ডারিন কমলা ছোট সাইট্রাস জাতীয় গাছের রসালো ফল। কমলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম (সাইট্রাস রেটিকুলাটা) । এটি রুটেসি পরিবারের সাইট্রাস গোত্রের।এটি কমলার স্বতন্ত্র প্রজাতিগুলোর একটি সদস্য হিসাবে বিবেচিত।
মাল্টা হচ্ছে Citrus × sinensis উদ্ভিদের ফল। এর ইংরেজি নাম Orange বা Sweet orange, যদিও অনেকে ভুল করে একে grapefruit বলে থাকেন। এছাড়া Mandarin orange-কে বাংলায় কমলা বলা হয়, যা C. reticulata উদ্ভিদের ফল। মাল্টা ফলটি জাম্বুরা (Citrus maxima) এবং কমলা (Citrus reticulata) এই দুই ফলের শংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কমলা এবং মাল্টা এই দুই ফলেরই দাম অনেকটা বেড়েছে। যেহেতু কমলা এবং মাল্টা কেজি ধরে বিক্রি করা হয় তাই অনেকেই জানতে চায় কমলা এবং মাল্টার দাম কতো। আজকে আমরা আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবো মাল্টা ও কমলা কত টাকা কেজিঃ
মাল্টা ও কমলা কত টাকা কেজি
বর্তমান বাজারে প্রায় সকল ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মাল্টার দাম ৩২০ থেকে ৩৭০ টাকা। এছাড়া ভালো মানের মাল্টা প্রতি কেজির দাম ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা যা আগে দাম ছিলো ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি মাল্টার দাম প্রায় ১০০ টাকা করে বেড়েছে। এছাড়া বর্তমানে প্রতি কেজি চীনা কমলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি দেশি কমলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। তিন মাস আগে এই কমলার দাম ছিলো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা । তবে স্থানভেদে এর দাম কম বেশি হতে পারে।
কমলা ও মাল্টার মধ্যে পার্থক্য
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে মাল্টা এবং কমলা একই ফল। কিন্ত অধিকাংশ মানুষ জানে না যে মাল্টা এবং কমলা এক নয়। কমলা ও মালটার মধ্যে পার্থক্য বলতে বললে অনেকেই হয়তো পারবেন। কিন্তু এটা কয়জন জানেন যে, যেটাকে কমলা বলেন সেটা আসলে কমলা নয়! দুটই Citrus Family এর অন্তর্ভুক্ত। স্বাদ-গন্ধ, পুষ্টি মানের দিক থেকে একই মনে হলেও এদের বৈশিষ্ট্য গত কিছু পার্থক্য আছে। নিচে কমলা এবং মাল্টার মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলোঃ
আমরা যেটাকে কমলা বলে চিনি তার প্রকৃত নাম হলো, ট্যাঞ্জেরিনস (Tangerines)। ১৮০০শ শতকে পালাকতা ফ্লোরিডায় এর উৎপত্তি। সে সময় মরোক্কোর ট্যাঞ্জিয়ার মধ্যদিয়ে এসব আমদানি করা হতো বলেই নাম হয়েছে ট্যাঞ্জেরিনস। এদের আবার ম্যান্ডারিনস নামেও ডাকা হয়। ট্যাঞ্জেরিনস হলো মুলত এই ম্যান্ডারিনস এর সাব-গ্রুপ। দেখতে খুব একটা দু-দর্শন বা আকর্ষণীয় না। রঙ লাল সদৃশ কমলা। খোসা ছাড়ানো খুব সহজ। খোসা অনেকটা একটুখানি বিজ্ঞান আলগা থাকে। এদের মাঝে মাঝে জিপার স্কিন ও বলা হয়। অতি সহজেই খুলে আসে। এটা কমলার তুলনায় বেশি মিষ্টি হয়। এটাতে ভিটামিন-এ এর পরিমান বেশি থাকে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত এটি সহজলভ্য।
আর আমরা যেটাকে মালটা নামে চিনি, সেটাই আসলে কমলা(orange)। এটাও Citrus family এর অন্তর্ভুক্ত। এটি মুলত পমেলো ও ম্যান্ডারিন এর সমন্বয়ে একটি হাইব্রিড জাত। এর উৎপত্তি আমাদের এশিয়াতে। এটি ট্যাঞ্জেরিনস এর তুলনায় সু-দর্শন, আকার সুন্দর ও একদম গোলাকার হয়। রঙ হয় হলুদাভ কমলা। এদের খোসা তুলনামূলক অনেক মোটা। সহজে ছাড়ানো যায় না। তাই এদের সাধারণত খোসা সহ কেটেই সার্ভ করা হয়। এছাড়া এরো কিছু পার্থক্য থাকতে পারে।
মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা
বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয় একটি ফল হলো মাল্টা। শুধু আমাদের দেশেই নয় বিশ্বের আরো অনেক দেশে এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে মাল্টা চাষ করা হয়। আমরা অনেকেই জানি মাল্টা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। অনেকেই জানতে চায় মাল্টা খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নেই মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা।
উপকারিতাঃ
১।মাল্টা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস মূহের সমৃদ্ধ উৎস। এটি ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বলি রেখা প্রতিরোধ করে লাবণ্য ধরে রাখে। মাল্টা ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি প্রদাহ জনিত রোগ সারিয়ে তোলে।
২। এক গ্লাস মাল্টার জুসকে ভিটামিন সি এর সবচেয়ে কার্যকর উৎস বলে মনে করা হয়। এটাকে ভিটামিন সি ট্যাবলেট হিসেবেও গ্রহণ করা যায়।
৩। মাল্টার ভিটামিন সি উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম সেল প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৪। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম ইকেট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।
৫। মাল্টা পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত কমলা খাওয়ার অভ্যাস পাকস্থলীর আলসার ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা দেবে। পাকস্থলীকে রাখবে সবল।
৬। গবেষণায় জানা যায়,মাল্টাতে উপস্থিত লিমিণয়েড, মুখ,ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী কোমল ও স্তন ক্যান্সারপ্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
৭। মাল্টাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাঁড়ের গঠনে সাহায্য করে।
৮। প্রতিদিন একটি করে মাল্টা খাওয়ার অভ্যাস আপনার দৃষ্টিশক্তিকে ভাল রাখে। কারণ, মাল্টায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি ও পটাসিয়াম। এ ভিটামিনগুলো আপনার দৃষ্টিশক্তির জন্য বেশ উপকারী।
৯। এতে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। এন্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে ওজন কমাতেও সহায়তা করে।
১০। জন্ডিস রোগ সারাতেও মাল্টা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। জন্ডিস লিভারজনিত একটি রোগ। আর মাল্টা হলো খুবই সহজপাচ্য খাবার। খুব সহজেই এটা হজম করা যায়। এটি লিভারকে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে থাকে। লিভারের কার্যক্ষমতাকে স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে মাল্টা। এছাড়াও মাল্টা খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা থাকতে পারে।
আশা করি আপনারা সকলে আমাদের এই পোস্ট থেকে কমলা ও মাল্টার দাম, কমলা ও মাল্টার মধ্যে পার্থক্য, মাল্টা খাওয়ার উপকারিতা এবং কমলা ও মাল্টা সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। পুড়ো পোস্টটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।