অনেকেই মেথি ব্যবহার করে থাকে। মেথি অনেক ঔষুধি গুন সম্পূর্ণ একটি উপাদান। মেথির অনেক পুষ্টিগুন থাকায় বর্তমানে মেথির অনেক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজারে ১০০ গ্রাম মেথির দাম ৩০-৩৫ টাকা, ৫০০ গ্রাম মেথির দাম ১৭০-১৭৫ টাকা। এবং প্রতি কেজি মেথির দাম ৩৫০ টাকার মধ্যে।তবে এর দাম একেক জায়গায় একেক রকম হতে পারে।
মেথি অনেক উপকারি একটি উপাদান। যা ওষুধের পাশাপাশি রান্নার কাজেও ব্যবহার করা হয়। মেথি একটি বর্ষজীবী গাছ। মানুষের শরীরের জন্য মেথি অনেক বেশি উপকারি। সাধারণত গ্রামে মেথি বেশি পাওয়া যায়। মেথি ইউনানী ও কবিরাজী চিকিৎসায় সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। মেথির অনেক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমনঃ মসলা হিসেবে, শাক হিসেবে, ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে। অনেকেই জানতে মেথি কত টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। চলুন জেনে নেই ১ কেজি মেথির দাম কত।
মেথির মধ্যে সব থেকে ভালো মেথি বলা হয় কাসুরি মেথি। কাসুরি মেথি ইন্ডিয়ায় উৎপাদন হয়। কাসুরি সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটির অনেক উপকার রয়েছে। কাসুরি মেথি ত্বক চুল শরীরএর জন্য অনেক উপকারি। কাসুরি মেথির অনেক উপকারি থাকায় এটির অনেক চাহিদা।অনেকেই কাসুরি মেথির দাম সম্পর্কে জানতে চায়। চলুন জেনে নেই কাসুরি মেথির দাম।
আমাদের দেশে অনেক আগে থেকে মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথি ব্যবহার করা হয় রান্নার কাজে। খাবারের সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়াতে মেথির ব্যবহার বেশ পুরোনো। এছাড়াও নানা কাজে লাগে মেথি। এর উপকারিতাও কিন্তু অনেক। আপনি যদি নিয়মিত মেথি খেতে পারেন, তবে দূরে থাকা যাবে শারীরিক অনেক সমস্যা থেকে। এটি চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না সহজে। তবে যেকোনো প্রকারে খেলেই হবে না, এটি খাওয়ার আগে জানা থাকা চাই সঠিক নিয়ম। নয়তো উপকারিতা না-ও মিলতে পারে। অনেকেই মেথি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে চায়। চলুন জেনে নেই মেথি খাওয়ার নিয়ম।
এক চা চামচ মেথি সারারাত জলে ভিজিয়ে সকালে খেতে পারেন। ভাল ফল পেতে মেথির এই জল দিনে দু'বার খেতে পারলে ভাল। পরীক্ষা করে দেখা গেছে মেথি ব্রেস্টমিল্কের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে যা সদ্যোজাতের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। এছাড়াও মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মেথি অনেক উপকারি একটি উপাদান। এটি মানব শরীরে অনেক উপকার করে। অনেকেই মেথি ব্যবহার করে থাকে কিন্ত মেথির উপকার সম্পর্কে অনেকেরি ধারণা নেই। আজকে আমরা জানিয়ে দিবো মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার ও পানীয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হয়। এই ধরনের লোকেরা তাদের খাদ্যতালিকায় মেথির বীজ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এটি নিশ্চিত করতে, একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হয়েছিল যা অনুসারে, মেথির বীজ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়াও, এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতেও কাজ করতে পারে। অন্যদিকে, অপর একটি গবেষণা অনুসারে, ডায়াবেটিসের উপর এর উপকারী প্রভাব এটিতে উপস্থিত হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাবের কারণে হতে পারে। এটি রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে পরিচিত। তাই যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে, তাদের এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে মেথির উপকারিতা
বার্ধক্যের সাথে সাথে জয়েন্টগুলোতে ফোলাভাব শুরু হয়, যার কারণে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। একে জয়েন্টে ব্যথা বা বাত বলে। এটি মোকাবেলা করার জন্য মেথি একটি প্যানেসিয়া রেসিপি, যা বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। মেথিতে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এই উপকারী উপাদান জয়েন্টগুলোতে প্রদাহ কমিয়ে বাতের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসও প্রচুর পরিমাণে মেথিতে পাওয়া যায়। তাই, মেথির ঔষধিগুণ হাড় এবং জয়েন্টগুলিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যার কারণে হাড় সুস্থ ও মজবুত থাকে।
কোলেস্টেরলের জন্য মেথির উপকারিতা
শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে মেথির ব্যবহার একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, মেথির বীজে নারিনজেনিন নামক একটি ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। এটি রক্তে লিপিডের মাত্রা কমাতে কাজ করতে পারে। এছাড়াও, এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার কারণে রোগীর উচ্চ কোলেস্টেরল হ্রাস করা যেতে পারে। তাই কোলেস্টেরল কমাতে মেথি বীজ উপকারী হতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে মেথির উপকারিতা
ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, তাই এই সমস্যা এড়িয়ে চলাই ভালো। এজন্য মেথি বীজের উপকারিতা দেখা যায়। একটি চিকিৎসা গবেষণা অনুসারে, মেথিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রভাব পাওয়া যায়, যা ক্যান্সারের সমস্যাকে দূরে রাখতে কাজ করতে পারে। হ্যাঁ, যদি কেউ ক্যান্সারে ভুগে থাকেন, তাহলে তাকে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানো উচিত।হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যে মেথির উপকারিতা।
মেথি খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকারিতাও রয়েছে।চলুন জেনে নেই মেথি খাওয়ার অপকারিতা।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মেথির বীজ স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার। আপনার খাদ্যতালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করার ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকতে পারে, কিন্তু অনেক সুবিধার সাথে এর অসুবিধাও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, এর ব্যবহার অনেক সমস্যা হতে পারে। এখানে আমরা মেথির ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি।
ডায়রিয়া
যদিও মেথির বীজ পাচনতন্ত্রের জন্য ভাল, তবে কখনও কখনও এটি ডায়রিয়ার কারণও হয়। খুব বেশি মেথি খেলে পেট খারাপ এবং ডায়রিয়া হতে পারে। স্তন্যপান করানো মহিলাদের যদি এটি খাওয়ার পরে পেট খারাপ হয় তবে এটি শিশুর ডায়রিয়াও হতে পারে। অতএব, এই জাতীয় লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ করুন।
জরায়ু সংকোচন
এই প্রতিবেদনে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, মেথি বীজ একটি উষ্ণতা প্রভাব আছে। গর্ভবতী মহিলা যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন তবে অকাল জরায়ু সংকোচনের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে। মেথির বীজে অক্সিটোসিন থাকে যা জরায়ু সংকোচন ঘটায়। তাই গর্ভবতী মহিলাদের শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শেই মেথির বীজ খাওয়া উচিত।
শিশুদের জন্য ক্ষতিকর
মেথি বীজ শিশুদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয় না। আমরা আগেই বলেছি যে এটি খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। পাশাপাশি, এর ভেষজ চা পান করা শিশুদের জন্য ভাল নয়, কারণ এটি তাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই শিশুদের মেথি সাপ্লিমেন্ট না দেওয়াই ভালো।
অ্যালার্জি
কিছু লোকের মেথির বীজ খেলে অ্যালার্জি হতে পারে। এই অ্যালার্জি মুখের উপর ফোলা হিসাবে দেখা যায়। সেই সঙ্গে কারও কারও শরীরে ফুসকুড়ি হতে পারে, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও হতে পারে এবং কেউ অজ্ঞানও হতে পারে। এ ছাড়া মেথি খাওয়ার পর অনেকেই বুকে ব্যথার অভিযোগ করেন। এটি প্রভাবে গরম, তাই কিছু লোক পাইলস, গ্যাস এবং এমনকি অ্যাসিডিটির অভিযোগ করে। এছাড়াও, কেউ যদি কোনও রোগের জন্য ওষুধ খায়, তবে তাকে অবশ্যই মেথির বীজ খাওয়ার আগে তার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
কোন মানুষের মেথি খাওয়া উচিত নয়?
আসুন এবারে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন মানুষের মেথি থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত-
মেথি কম রক্তে শর্করার রোগীদের এড়ানো উচিত, কারণ এটির হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রয়েছে।
মেথিতে অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ প্রভাব দেখানো হয়েছে, যা রক্তচাপ কমাতে পারে। তাই যাদের রক্তচাপ কম তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মেথি অনেক উপকারি একটি খাবার যা মানব দেহে অনেক উপকার করে। মেথির অনেক উপকারি গুন রয়েছে। তবে এর উপকারি গুনের পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। চলুন জেনে নেই মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
মেথি বা মেথির জল খেলে কারও কারও ত্বকে নানা ধরনের অ্য়ালার্জি দেখা দেয়। যাঁদের ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়, তাঁরা মেথির জল এড়িয়ে চলুন। মেথির জলের কারণে পেটের ব্যাকটিরিয়ার নানা সমস্যা হতে পারে। এতে হঠাৎ খুব গ্যাস হতে পারে পেটে। মেথি মুখের ভেতরে তিতা স্বাদের প্রদাহ তৈরি করে। যার ফলে অনেকেরই বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। এটির ব্যবহারে রক্তে চিনির পরিমাণ হঠাৎ কমে যেতে পারে যা ডায়বেটিস রোগীদের বিপদজ্জনক।
আশা করি আপনারা আমাদের এই পোস্ট থেকে মেথির দাম ও মেথির উপকার ও অপকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেড়েছেন। আমাদের এই পোস্টে মেথি সম্পর্কে সব কিছু বিস্তারিত দেওয়া আছে। আশা করি আমাদের পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। পুড়ো পোস্টটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।